সময় টিভি: গণমাধ্যমে আলেমদের অংশগ্রহণ

গণমাধ্যমে আলেমদের অংশগ্রহণ,বিশ্ব নিয়ন্ত্রণ করে তিনটি বিষয় ৷ এক. রাজনীতি, দুই. অর্থনীতি, তিন. সংস্কৃতি ৷ আর এই তিনটিকেই নিয়ন্ত্রণ করে মিডিয়া বা গণমাধ্যম ৷ সুতরাং তরুণ আলেমদের গণমাধ্যমে অংশগ্রহণ করা সময়ের দাবী ৷

মুফতি রেজাউল করিম:

মিডিয়া অর্থ হলো, মাধ্যম ৷ নবীগণ আল্লাহ তায়ালার মিডিয়া ৷ আল্লাহ তায়ালা তাদের মাধ্যমে স্বীয় বার্তা,  বাণী আমাদের পর্যন্ত প্রেরণ করেছেন ৷ আর আলেমগণ হলো রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ওয়ারিস ৷ তারপরে  কোনো নবী আসবেন না ৷ তাই বর্তমান যামানায় আলেমগণই আল্লাহর তায়ালার মিডিয়া ৷

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,  الدين النصيحة
অর্থাৎ "দীন হলো কল্যাণকামিতা ৷"

কল্যাণ ও ভালো কাজের প্রচার প্রসার  ও অকল্যাণের প্রতিরোধই মিডিয়ার দায়িত্ব। যে মিডিয়া এ ভূমিকা ও দায়িত্ব পালন করে ইসলাম তাকে পূর্ণ সাহায্য সমর্থন করে। বরং উৎসাহ যোগায়। মিডিয়ায় এখন অকল্যাণপন্থীদের আধিপত্য । কল্যাণপন্থীরা মিডিয়ামহল তাদের ওপর ছেড়ে দিয়ে রাখতে পারেন না।

আরো পডুন>> মহামারীতে মুমিনের করণীয়৷ মূল ইবনে হাজার আসক্বালানী

তাবলিগ মানে পৌঁছে দেওয়া। মিডিয়ার কাজও সঠিক ও নির্ভুল তথ্য মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া। তাই তাবলিগ ও দাওয়াতের উদ্দেশ্য  পূরণে সবধরণের মিডিয়া কাজে লাগানোর কোনো  বিকল্প নেই । রাসূলুল্লাহ  সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর যুগের সবচেয়ে বড় মিডিয়া  গণমাধ্যম হাট-বাজার ও পাহাড়কে বেছে নিয়েছিলেন  মহান  আল্লাহর পয়গাম বা বার্তা তুলে ধরতে । বর্তমানের  মিডিয়া  তারই পরিবর্তিত  রূপ। তাই মিডিয়াকে  দীনের প্রচার ও  প্রসারের কাজে লাগানো  সময়ের  অন্যতম ফরজ দায়িত্ব।

            মিডিয়ার দায়িত্ব


মিডিয়ার দায়িত্ব হলো মানুষকে সচেতন করা ৷ মানুষের মধ্যে গণযোগাযোগ তৈরি করা ৷ সঠিক ও নির্ভুল সংবাদ মানুষের সামনে উপস্থাপন করা ৷ সাংবাদিক সমাজকে বলা হয় দেশ ও জাতির বিবেক ৷ কিন্তু কিছু কিছু সাংবাদিকদের দায়িত্বহীনতা ও চরম মিথ্যাচারের কারণে এ মর্যাদা ও সম্মানজনক পদটি যারপরনাই কলুষিত হচ্ছে ৷ মিডিয়া ও গণমাধ্যমের প্রতি মানুষের ভালোবাসা ও আস্থা  শূন্যের কোঠায় নেমে  এসেছে ৷ মানুষ  তাদের সাংবাদিক  না বলে বলছে "সাংঘাতিক" ৷

সবধরনের যুক্তিহীন বিষয়ের সমালোচনা করা ও অসঙ্গতির বিষয় সমাজের সামনে  সমানভাবে তুলে ধরাই মিডিয়ার কাজ ৷ গার্মেন্টসকর্মীদের অহেতুক আনা নেওয়া, হাটবাজারে প্রচণ্ড লোকের সমাগম হওয়া, ত্রান বিতরণ করা মন্ত্রীনেতাদের জানাজা, সামাজিক রাজনৈতিক সমাবেশ সব নিয়ে সোচ্চার থাকলে মানুষ মিডিয়াকে একচোখা বলত না ৷
কিন্তু অন্যসময় একেবারে  নীরব  থেক শুধু জানাযায় বেশি  মানুষ হওয়া, মসজিদে নামায চালু রাখা ইত্যাদি বিষয়ে অতি  বাড়াবাড়ি করলে তো মানুষ  একচোখা বলবেই ৷ শুধু তাই নয় মানুষ ঘৃণা করবে,  অভিশাপ দিবে ৷

এর কারণ হলো, বর্তমান সময়ের অধিকাংশ মিডিয়া-ই বামপন্থিদের হাতে ৷ এন্ট্রি ইসলাম ও মুসলিমদের হাতে ৷ আর যারা ওই সব মিডিয়ায় কর্মরত তারাও অধিকাংশ তাদেরই মতো ৷ ফলে তারা তাদের সুস্থ বিবেক বিক্রি করে দিয়েছে ৷ তারা দিনকে রাত আর রাতকে দিন বানাতে পারে ৷ তিলকে তাল আর তালকে তিল হিসাবে উপস্থাপন করতে পারে ৷ তারা স্বজ্ঞানে বিচিত্র ভ্রষ্টাচারে লিপ্ত হতে পারে ৷

আরো পডুন>>হ্যান্ড স্যানিটাইজার দিয়ে হাত ধোয়া কি জায়েয হবে?

গণমাধ্যমের বিচিত্র ভ্রষ্টাচারের একটি উদাহরণ দিই-
হয়তো মনে আছে সবার ৷ ৫ ই মে ২০১৩ র শাপলা চত্বরের ঘটনা ৷ শাপলা চত্তর ছিলো মুসলামানের রক্তে রঙ্গিন ৷ রাস্তায় পরে ছিলো লাশ আর লাশ ৷ পরের দিন প্রথম আলো পত্রিকা কী সংবাদ ছেপে ছিলো দেখুন- "হেফাজতের তাণ্ডবে ‘সবুজ’ হারাল মতিঝিল-পল্টন৷"
প্রথম আলোর চোখ কি রক্তে রাঙ্গা লাশের ওপর পরেনি? পূর্বাপর ঘটনা কি জানে না? সবই দেখেছে সবই জেনেছে বাট প্রথম আলো  তার
 আসল ও ভ্রষ্ট চরিত্রটা  ফুটিয়ে তুলেছে ৷

এ জন্যই আলেমদের গণমাধ্যমে অাসতে হবে ৷ তাদের কদাচার, মিথ্যা ও অসত্য বিষয় মানুষের সামনে তুলে ধরতে হবে ৷ তাদের ব্যবসার চাকা ঘুরিয়ে দিতে হবে ৷

আমাদের পুরো কওমী  অঙ্গনে মাদরাসা রক্ষার্থে ৷ একটা গণমাধ্যম  গ্রুপ দরকার ৷ একটা পত্রিকা, একটি টেলিভিশন চ্যানেল নয় আমি বলব  একটি গণমাধ্যম  গ্রুপের কথা ৷
তাতে হবে কি-  প্রথম আলো গ্রুপ থেকে অাক্রমণ করবে মাদরাসাকে বা কিছু বলবে ইসলামের বিরুদ্ধে বা ইসলামী আচার আচরণ ও সংস্কৃতির বিরুদ্ধে ৷ আমাদের গ্রুপের সাংবাদিকরা প্রথম আলো গ্রুপের পাল্টা জবাব দিতে থাকবে ৷ গালাগালি করবে না ৷ সভ্যভাষায় ভদ্রতার সাথে ৷ যারা ইসলাম বিরোধী,  ওদের ব্যবসার ভেতরের শয়তানিকে প্রকাশ করে দেবে ৷

আমাদের গালি দেবে আরেকটা গ্রুপ থেকে ৷ বসুন্ধরা গ্রুপ থেকে ৷  আলেমদের বিরুদ্ধে বলবে তাদের কোনো মিডিয়া অথবা মাদরাসার বিরুদ্ধে বলবে ৷ আমাদের গণমাধ্যম পাল্টা তার এক্সে রিপোর্ট  প্রকাশ করবে ৷ প্রথমে ঝগড়া চলতে থাকবে কিছুদিন ৷ তিন চার মাস পর মিটিংয়ে বসবে বাধ্য হয়ে ৷ সমঝোতা করবে ৷ বসে বলবে,  আপনারা আমাদের ছেড়ে দেন আমরাও আপনাদের ছেড়ে দিই ৷ আমরা মাদরাসার বিরুদ্ধে কিছু বলব না ৷ কিছু লিখবো না ৷  এটাই গণমাধ্যমের খেলা ৷ গণমাধ্যমই হতেপারে মসজিদ, মাদরাসা,  ইসলামী ইতিহাস ও ইসলামী মূল্যবোধ রক্ষার  বাউন্ডারি ওয়াল ৷

সংক্ষেপে গণমাধ্যম


গণমাধ্যম বা মিডিয়া কাকে বলে?
"জনগনের কাছে সংবাদ, মতামত ও বিনোদন যে সব মাধ্যমে পরিবেশিত হয় তাকে গণমাধ্যম বলে।"
সংবাদমাধ্যম শব্দের উদ্দেশ্যও একই নেওয়া হয় ৷
পত্র পত্রিকা, টিভি চ্যানেল, অনলাইন নিউজ পোর্টাল কিংবা রেডিও সবই গমমাধ্যমের আওতাভুক্ত ৷

                মিডিয়ার অবস্থান

মিডিয়া বা গণমাধ্যমকে বলা হয়ে থাকে রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ বা খুঁটি ৷ শুধু কি তাই ? বলা হয়, বিশ্ব নিয়ন্ত্রণ করে তিনটি বিষয় ৷
এক. রাজনীতি, দুই. অর্থনীতি, তিন. সংস্কৃতি ৷ আর এই তিনটিকেই নিয়ন্ত্রণ করে মিডিয়া বা গণমাধ্যম ৷ সুতরাং তরুণ আলেমদের গণমাধ্যমে অংশগ্রহণ করা সময়ের দাবী ৷

             মিডিয়ার প্রকার

মিডিয়া প্রধানত দুই প্রকার- এক. প্রিন্ট মিডিয়া,  দুই. ইলেক্ট্রনিক্স মিডিয়া ৷
প্রিন্ট মিডিয়া বলা হয়,সেই সমস্ত মিডিয়াকে যা প্রিন্ট করে তৈরি করা হয় ৷
প্রিন্ট মিডিয়া আবার দুই প্রকার ৷ এক. প্রিয়ডিকল মিডিয়া ৷ যেমন, বই পুস্তক ৷  দুই নন প্রিয়ডিকল মিডিয়া যেমন, দৈনিক প্রচারিত সংবাদপত্র ৷

ইলেক্ট্রনিক্স মিডিয়া বলা হয়, যা ইলেক্ট্রনিক যন্রের সাহায্যে চলে ৷
এটি আবার তিন প্রকার ৷ এক. অডিও মিডিয়া, দুই. ভিডিও মিডিয়া, তিন. কম্পিউটার মিডিয়া ৷
মিডিয়ার যত প্রকারের কথা বলা হলো সবগুলোই এখন স্বচল ৷ কোনোটি কম কোনোটি বেশি ৷ প্রত্যেকটি মিডিয়ায় কওমী আলেমদের অংশগ্রহণ ও পদচারণা দরকার ৷

আরো পডুন>> করোনা ভাইরাসের কারণে মাস্ক পরে নামায আদায় করা কি জায়েয হবে?

পরিশেষে অনলাইন পত্রিকা ইসলাম টাইমস এর সম্পাদক শরীফ মুহাম্মাদ এর একটি কথার মাধ্যমে প্রবন্ধের ইতি টানছি ৷ তিনি বলেন,

"আমরা যদি এক হাজার তরুণ আলেম কলম হাতে তুলে নিই, আমাদের হাতে যদি পাঁচটা বা দশটা গণমাধ্যম চলে আসে ইনশাআল্লাহ আজকের যে গণমাধ্যম ব্যবহার করে তারা এক শ্যামল কান্তির কাছে সারা বাংলাদেশের মুসলমানকে কান ধরাচ্ছে, আমরা যদি তৈরি হই,  আগামী এক বছর দুই বছর পরে, কোনো একজন মক্তবের শিক্ষককে রাস্তাঘাটে কোনো একজন মানুষ অপমান করলে আমরা সব রকমের হর্তাকর্তাকে তার সামনে কানে ধরিয়ে দাঁড় করাতে পারব ইনশাআল্লাহ ৷ এটাই গণমাধ্যমের কাজ, যদি আমরা তৈরি হই ৷ যদি আমরা ওই জায়গায় যাওয়ার চেষ্টা করি৷"

[লেখক: মুফতি রেজাউল করিম, মুহাদ্দিস, সুফফাহ মাদরাসা, জলিলপুর, মহেশপুর, ঝিনাইদহ]

আরো পডুন>> করোনা পরিস্থিতিতে জামাতের নামাজে এক মুসল্লি অপর মুসল্লি থেকে দূরত্বে দাঁড়াতে পারবে কিনা?

সত্য প্রকাশ

আমার নামঃ মুফতি রেজাউল করিম। আমি একটি কওমী মাদরাসায় শিক্ষকতা করছি। পাশাপাশি এ ব্লগের সম্পাদক এর দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছি। অনলাইন সম্পর্কে মোটামুটি জ্ঞান থাকায় সময় পেলে দ্বীন ইসলাম নিয়ে কিছু লেখার চেষ্টা করি। যেন অনলাইনেও মানুষ ইসলামি জ্ঞান অর্জন করতে পারে। আপনিও চাইলে এ ব্লগে লিখতে পারেন।

Please Select Embedded Mode For Blogger Comments

নবীনতর পূর্বতন