ইসলামের দৃষ্টিতে হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার কি বৈধ?

ইসলামের দৃষ্টিতে হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার কি বৈধ?
HMREZAULISL:AM.BLOGSPOT.COM

ইসলামের দৃষ্টিতে হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার কি বৈধ?



বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে আতঙ্কিত মানুষ। নিরব এই মরণব্যাধি থেকে নিরাপদে থাকতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থ্যার পক্ষ থেকে দেওয়া হয়েছে নানা দিক-নির্দেশনা। যার মধ্যে অন্যতম হলো, সার্বক্ষণিক পরিস্কার পরিচ্ছন্ন থাকা। ঘন ঘন হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার বা সাবান দিয়ে হাত ধোয়া। তাদের এই দিক-নির্দেশনা পেয়ে দেশব্যাপী হ্যান্ড স্যানিটাইজার সংগ্রহের হিড়িক পড়েছে। প্রতিটি অফিস আদালতে প্রবেশের আগে হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করতে হচ্ছে। সবার মনে প্রশ্ন জাগছে, হ্যান্ড স্যানিটাইজার দিয়ে কি হাত ধোয়া জায়েজ হবে? কারণ এতে তো অ্যালকোহল আছে।

অ্যালকোহল মিশ্রিত হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহারের শরয়ি বিধান জানতে হলে আমাদের অ্যালকোহলের প্রকারভেদ সম্পর্কে ধারণা নিতে হবে।

ইসলামী আইনবিদরা অ্যালকোহলকে তিন ভাগে ভাগ করেছেন। যথা :


১. আঙ্গুর, কিসমিস ও খেজুরের মদ-শরাব থেকে সংগৃহীত।

২. উল্লিখিত ফলাদি ব্যতীত অন্য যেকোনো ফল/বস্তুর শরাব থেকে সংগৃহীত যেমন-জব, গম, আলু, মধু ইত্যাদি।

৩. কোনো প্রকার শরাব থেকে নয় বরং সরাসরি যেকোনো ধরনের ফলমূল, সবজি ইত্যাদি থেকে সংগৃহীত।

প্রথম প্রকারের অ্যালকোহল সম্পূর্ণ নাপাক এবং এটির ব্যবহারও হারাম। তবে একেবারে নিরূপায় অবস্থায় যেমন এটি ছাড়া অন্য কোনো ওষুধ না থাকলে তখন প্রয়োজন পরিমাণ ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।
(আল বাহরুর রায়েক : ১/১২২)

দ্বিতীয় প্রকারের অ্যালকোহলের ব্যাপারে ফুকাহাদের মতভেদ রয়েছে। যেমন ইমাম আবু হানিফা (রহ.), ইমাম আবু ইউসুফ (রহ.)-এর মতে এ ধরনের অ্যালকোহল পাক এবং এই পরিমাণ ব্যবহার যার দ্বারা নেশা হয় না, বৈধ।

ইমাম মুহাম্মদ (রহ.)-এর মতে, এ ধরনের অ্যালকোহলেও নাপাক এবং এর সামান্য পরিমাণ ব্যবহারও হারাম। স্বাভাবিক অবস্থায় ফাতওয়া ইমাম মুহাম্মদ (রহ.)-এর মতের ভিত্তিতেই দেওয়া হয়। তবে বর্তমানে ব্যাপক হারে যখন এর ব্যবহার শুরু হয়েছে, তখন ইমাম আবু হানিফা (রহ.)-এর মতের ওপরও আমল করার সুযোগ রয়েছে। তবে সর্বোচ্চ সতর্কতা হলো ইমাম মুহাম্মদ (রহ.)-এর মতের ওপর আমল করা। (নাওয়াদেরুল ফিকহ : ২/৩৭১)

তৃতীয় প্রকার অ্যালকোহল সম্পূর্ণ পবিত্র ও হালাল যদি এতে নেশা না হয়।

উল্লেখ্য, ওষুধে মিশ্রিত অ্যালকোহল কোনো প্রকারের তা জানা সম্ভব না হলে শুধুমাত্র ধারণাপ্রসূত কারণে এটিকে নাজায়েজ বলা যাবে না। বরং এটি ব্যবহারের সুযোগ থাকবে।

মোদ্দা কথা হলো, ওষুধে ব্যবহৃত অ্যালকোহলে কোন ধরনের তা নিশ্চিতভাবে জানা যাবে অথবা যাবে না। যদি জানা যায় তখন ওপরে বর্ণিত হুকুম মতে আমল করতে হবে। আর যদি জানা না যায় তখন অহেতুক সন্দেহ সংশয়ে না পড়ে তা ব্যবহার করা যাবে। (বুহুছ ফি কজায়া ফিকহিয়্যাহ : ১/৩৪০)

এ বার আসুন হ্যান্ড স্যানিটাইজারের বিষয়ে,
বিজ্ঞ ডাক্তারগণ বলেন, হ্যান্ড স্যানিটাইজারে যে অ্যালকোহল মিশ্রিত করা হয়ে থাকে সেটি ওই অ্যালকোহল নয় যেটি পান করা হয়ে থাকে৷ আমরা যানি, যে অ্যালকোহল পান করলে নেশা সৃষ্টি হয় সেটি হারাম৷

অথবা বলা যায়, আমরা হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করি ঔষধ বা চিকিৎসা হিসেবে৷ আর শরীয়তের মুলনীতি হলো,চিকিৎসা হিসেবে যে জিনিষ ব্যবহার করা হয় তার সাথে যদি হারাম বস্তুও মিশ্রিত থাকে আর তার থেকে উত্তম কোন ব্যবস্থা না থাকে তাহলে প্রয়োজন অনুপাতে তা ব্যবহার করা জায়েয ৷

অার একটি বিষয় হলো, আমরা যে হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করি তাতে যে অ্যালকোহল থাকে তাৎক্ষণিক ভাবে তা বাষ্প হয়ে উড়ে যায়৷ সুতরাং তা ব্যবহার করা বৈধ হবে৷

সত্য প্রকাশ

My name: Mufti Rezaul Karim. I am teaching in a communal madrasah, I try to write something about Deen Islam when I have time because I have a fair amount of knowledge about online. So that people can acquire Islamic knowledge online. You can also write on this blog if you want.

Please Select Embedded Mode For Blogger Comments

নবীনতর পূর্বতন