আপনারা এতদিন জাকির নায়েক কে নিয়ে নিজেদের বিজনেস টিকিয়ে রেখে ছিলেন৷ মাযহাব মানা শিরক ও কুফুরী এ জাতীয় চটকদার বিভিন্ন ফতোয়া দিতেন৷ এবার তো তিনি মাযহাব নিয়ে নিজের অভিমত ব্যক্ত করলেন৷ এবার তার ব্যাপারে আমরা আপনাদের ফতোয়ার জন্য ওয়েট করছি৷
(পাঠকদের বোঝার সুবিধার্থে তার বক্তব্যটি বাংলায় অনুবাদ করে পাবলিশ করা হলো)
পাকিস্তানের লাহোর থেকে আব্দুল করিম নামের এক ভাইয়ের প্রশ্নের উত্তরে ড. জাকির নায়েক বলেন,
যদি সব মুসলিম একই কুরআন হাদীস মানে; তাহলে চার মাযহাব তৈরি হলো কেন? কেন এত মত পার্থক্য? এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ ও স্পর্শকাতর প্রশ্ন৷ আমি এই বিষয়ে একমত যে, আহলে সুন্নত ওয়াল জামাতের মধ্যে মুসলিমদের বড় একটি অংশ আমরা সবাই একই কুরআন হাদীস মেনে চলি৷ কুরআনের পর বুখারী সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ৷ তারপর সহীহ মুসলিম৷ তারপর কুতুবে সিত্তাহ, আবু দাউদ, তিরমিযি, ইবনে মাযাহ, নাসাঈ৷
এই বিষয়ে সবাই একমত৷ এখন প্রশ্ন হলো, মাযহাব চারটি কেন? এবং কেন তাদের মধ্যে মতপার্থক্য হলো?
প্রধান যে চারটি মাযহাব বর্তমানে প্রচলিত আছে ইমাম আবু হানীফা, এমাম মালেক, ইমাম শাফেয়ী, ইমাম আহমাদ বিন হাম্বল৷ আমি তাদের সকলকে ভালোবাসি ও শ্রদ্ধা করি৷ দোয়া করি আল্লাহ যেন তাদেরকে দয়া করেন ও জান্নাতুল ফিরদাউস দান করেন৷
প্রথমেই আপনাকে (প্রশ্নটি) সংশোধন করে দেই৷ এই চারটি মাযহাব এসেছে, ইসলামকে মুসলিম উম্মাহর নিকট ব্যাখ্যা করতে৷ তারা সব বিষয়ে সবসময় মতপার্থক্য করেন না৷ তারা মাঝে মধ্যে মতভেধ করেন৷ প্রায় ৫২-৯৫% বিষয়ে সব মাযহাবের মত একই৷ ছোট খাট কিছু বিষয়ে তাদের মতভেদ আছে৷
প্রধান বিষয়গুলো যেমন, পাঁচ ওয়াক্ত সালাত যা আমরা আদায় করি৷ যাকাতের বিষয়ে, হজ্বের বিষয়ে, চারটি মাযহাব আসলেই একই রকম৷ সালাতের ছোট ছোট কিছু বিষয় কিংবা হজ্জ সবই ছোট খাট কিছু মতভেদ৷ চার ইমামের সবাই বলেছেন, যদি তোমরা আমার ফতোয়া যা আল্লাহ ও তার রাসূলের বিপরীতে যাবে, যা কুরআন ও সহীহ হাদীসের বিপরীতে যাবে আমার সেই ফতোয়াকে দেওয়ালে ছুড়ে ফেলবে৷
এই চারজন ইমামের সবাই অনেক জ্ঞানী ছিলেন৷ সকলেই দ্বীনকে আমাদের নিকট ব্যাখ্যা করেছেন৷ তাহলে তারা মতভেদ করলেন কেন? আমি নিজেও অনেক বছর ধরে এর জবাব খুঁজেছি৷ আলহামদুলিল্লাহ! আল্লাহ আমাকে দয়া করেছেন৷ অনেক স্কলারের সাথে আমার দেখা হয়েছে৷ চারটি মাযহাবের মধ্য থেকেই আমি তাদের সাথে অনেক সময় কাটিয়েছি৷ আমি নিজেও তাদেরকে প্রশ্নটি করেছি৷ তাদের উত্তরগুলোর মধ্যে কিছু কিছু ভালো ছিলো৷ কিন্তু সাধারণ মানুষদের উপযোগী উত্তর ছিলো না৷
তাদের সাথে সাক্ষাতের পর বিভিন্ন মতভেদ সম্পর্কে আমার দৃষ্টিভঙ্গি বড় হয়েছে৷ আল্লাহ সূরা ইমরানের ১০৩ আয়াতে বলেছেন, আল্লাহর রশি শক্ত করে ধর; বিভক্ত হইও না৷ কুরআন হাদীসকে আমাদের শক্ত করে ধরতে হবে৷ সাধারণ মানুষকে বুঝানোর জন্য আমি কিছু উদাহরণ দিবো৷ উদাহরণ দিয়ে বুঝানোটা খুবই ভালো৷
আমি খুব সহজ একটা প্রশ্ন করি, তাদের নিকট যারা ইংরেজি জানেন৷ 'কালার' শব্দটির বানান কি? বলতে পারবেন? ফেসবুকে বা ইউটিউবে উত্তর দিতে পারেন৷ আমি কোনো উত্তর পাচ্ছি না৷ কেউ বলবে 'colour' আবার কেউ বলবে 'color' কোনটা সঠিক? যে ইংরেজি ভালো জানে সে বলবে, প্রথমটি হচ্ছে ব্রিটিশদের বানান৷ ২য় টি হচ্ছে আমেরিকান বানান৷ তাহলে কোনটা সঠিক? Colour নাকি color?
কেউ বলবে প্রথমটা সঠিক কেউ বলবে দ্বিতীয় টা৷ কেউ বলবে দুটোই সঠিক৷ কিন্তু মতভেদ হলেও কেউ এটা নিয়ে মারামারি করেন না৷ ব্রিটিশদের শাসনাধীন দেশে ব্রিটিশ নিয়মে বানান করবে৷ আমরা দুটো বানানেই রাজি আছি৷ ব্রিটিশরা একটি বানান পছন্দ করে৷ কিন্তু কেউ অন্যটা মানলেও সমস্যা মনে করে না৷ আমেরিকানরাও এরকমই বলবে৷
একইভাবে আপনি 'often' শব্দটি কীভাবে উচ্চারণ করেন? কেউ বলবে, 'অফেন' কেউ বলবে, 'অফটেন'৷ একেকজন একেকটা বলবে৷ 'T' এর উচ্চারণ হবে কি না এ নিয়ে বিতর্ক আছে৷ কিন্তু সবাই বলবে দুটোই সঠিক৷
একই ভাবে, আমাদের যে চারটি মাযহাব আছে৷ এ ছাড়াও ছিলেন হাজার হাজার স্কলার ও ইমাম৷ ইমাম আবু হানিফা, শাফেয়ী, মালেক, আহমাদ বিন হাম্বল৷ তারা ছিলেন বেশি জনপ্রিয়৷ কিংবা তাদের ছাত্ররা তাদেরকে জনপ্রিয় করে তোলেন৷ এ ছাড়াও অনেক ইমাম ও শাইখ ছিলেন৷ এভাবেই আমরা প্রধান চারটি মাযহাব পেয়েছি৷ কিন্তু তারা কেউ উম্মাহকে বিভক্ত করতে চাননি৷ কারণ, কুরানে এটাকে সরাসরি নিষেধ করা হয়েছে
আপনার জন্য নির্বাচিত আর্টিকেল:
- সহীহ হাদীস কি বুখারী মুসলিমে সীমাবদ্ধ?
- বুখারী শরীফের সব হাদীস কি সহীহ?
- নানার আগে মা মারা গেলে নাতীরা কি নানার থেকে মিরাছ পায়?