আমরা দুনিয়ায় মানুষের চক্ষুর অন্তরালে কত পাপ আর অপকর্মই না করে থাকি৷ যদিও তা সম্পর্কে মানুষ জানে না৷ কিন্তু আল্লাহ তায়ালা থেকে আমরা তা লুকাতে পারি না৷ একবার ভাবুন তো, আল্লাহ যদি হাশরের ময়দানে সবার সম্মুখে যদি তা পাবলিশ করে দেন৷ তখন কেমন হবে আমার আপনার অবস্থা? কিন্তু আল্লাহ তায়ালা রহমান ও রহিম ৷ যে বা যারা এ পার্থিব জগতে অন্যের দোষ গোপন রাখবে৷ লুকায়িত রাখবে৷ আল্লাহ তায়ালা তার দোষও গোপন রাখবেন৷
হযরত আবু হুরায়রা রাযিআল্লাহু তায়ালা আনহু৷ আল্লাহর নবীর প্রিয় সাহাবী৷ তার থেকে বর্ণিত একটি হাদিসে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
من ستر مسلما ستره الله في الدنيا والآخرة
আরো পড়ন→→ হাদীস শাস্ত্রে ইমাম ইয়াহইয়া ইবনে মাঈনের অবদান
কোনো মুসলমানের মৃত্যুর পর তাকে গালি দেওয়া তার দোষ চর্চা করা হারাম ও কবিরা গুনাহ ৷ এ থেকে আমাদেরকে নিষেধ করা হয়েছে৷ কারণ, তারা স্বীয় কর্মফল পর্যন্ত পৌঁছে গেছে। তা ছাড়া এতে আমাদের জন্য না দ্বীনী ফায়দা আছে আর না দুনিয়াবী৷ বরং আমাদের তো উচিৎ তাদেরকে গালি না দিয়ে তাদের দোষ চর্চা না করে নিজেদের দোষ তালাশে আত্মনিয়োগ করা৷ এবং নিজেকে পরিশুদ্ধ করা৷
আরো পড়ুন→→হাদীস শাস্ত্রে ইমাম ইমাম শুবা ইবনুল হাজ্জাজ
মনে করুন আপনার পিত মাতা কেউ ইন্তেকাল করলো৷ আর আমি তাকে গালি দিলাম বা তার দোষ চর্চা করলাম৷ এতে কি তার কোনো ক্ষতি হবে৷ অবশ্যই না৷ কারণ, সে যে নেক কাজ করে গেছে তার প্রতিদান সে পেয়েই যাবে৷
তবে আপনার পিতা মাতা কে গালি দেওয়ার কারণে আপনি কষ্ট পাবেন৷ আপনার আত্বীয় স্বজন কষ্ট পাবেন৷ তাই আল্লার নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মৃত ব্যক্তিকে গালি দিতে নিষেধ করেছেন যেন তার আত্বীয় স্বজন কষ্ট না পায়৷ হযরত ইবনে আব্বাস রাযিআল্লাহু তায়ালা আনহুমা থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
ভালো মন্দ মিলিয়েই মানুষ৷ মানুষ মাত্রই ভুল হবে৷ গুনাহের কাজ করবে৷ ভালো মন্দ কর্ম রেখেই সে দুনিয়া থেকে বিদায় নিবেন৷ বিদায়ের পর তার প্রতি আমাদের করণীয় ও বর্জনীয় কি? এমন কী কাজ করলে তার আখিরাতে কল্যান হবে? সে কবরে শান্তি পাবে? এ বিষয়ে হাদীসে বিস্তারিত আলোচনা রয়েছে৷ তম্মধ্যে একটি বিষয় হলো, আমরা তার ভালো কর্মের আলোচনা করবো৷ তার কোনো সমালোচনা করবো না৷ পেয়ারা হাবীব আমাদেরকে এমনই নির্দেশ করেছেন৷
হযরত ইবনে উমর রাযিআল্লাহু তাআলা আনহুমা থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেছেন,
اذكروا محاسن موتاكم، وكفوا عن مساوئهم
আরো পড়ুন→→ আল্লামা শাহ আহমাদ শফীর সংক্ষিপ্ত জীবনী
জীবিতদের তুলনায় মৃতদের গীবত করা বেশি খারাপ ও নিকৃষ্ট কাজ৷ কেননা, জীবিত ব্যক্তি থেকে ক্ষমা চেয়ে মাফ করিয়ে নেওয়া সম্ভব কিন্তু মৃত ব্যক্তির নিকট ক্ষমা চাওয়া ও পাওয়ার আশা করাও অসম্ভব৷ ইবনে বাত্তাল রাহিমাহুল্লাহ বলেছেন, মৃত ব্যক্তিদেরকে গালি দেওয়া গীবতের নামান্তর তাই তাদেরকে গালি দেওয়া নিষিদ্ধ৷
বনী আদম প্রত্যেকেরই কিছু না কিছু ভুল ভ্রান্তি আছে৷ আছে দোষ ও গুণ৷ ভুল ছাড়া কোনো মানুষ পাওয়া প্রায় অসম্ভব৷ তেমনি কোনো দোষে দুষ্ট নয় এমন মানুষ পাওয়াও ইম্পসিবল৷ একজন মুমিনের বড় কিছু সিফত বা গুণ হলো, সে কারো গীবত করবে না৷ কারো দোষ চর্চা করবে না৷ পরনিন্দা করবে না৷ অন্যের দোষ গোপন রাখা একজন মুমিনের কর্তব্য। তার উত্তম চরিত্রের বহিঃপ্রকাশ৷