মৃত্যু এক সুনিশ্চিত ও অবধারিত বিষয়৷ যা বিশ্বাস করে অবিশ্বাসী ও কাফেররাও৷ আস্তিক নাস্তিক সকলেই তা মানতে বাধ্য৷ যার মাধ্যমে নিঃশ্বেস হবে দুনিয়ার সমস্ত ভোগ বিলাস৷ সুযোগ পাবে না কেউ আর নেকি বদি করার৷ বন্ধ হয়ে যাবে আমলের সকল দ্বার৷
হ্যাঁ, তবে তিনটি আমল কেয়ামত পর্যন্ত চলতে থাকবে৷ এক. সদকায়ে জারিয়া৷ দুই. নেক সন্তানের পিতা মাতার জন্য দোয়া৷ তিন. উপকৃত জ্ঞান৷
একজন মানুষ যখন পৃথিবী থেকে বিদায় গ্রহণ করে৷ চলে যায় তার রবের নিকটে৷ আমরা তাকে কবরস্ত করে আসি কোনো এক বাস বাগানে৷ মানুষ মৃত্যুর পর থেকে কবরস্ত করা পর্যন্ত রয়েছে ইসলামী নানাবিধ বিধি বিধান৷যা প্রত্যেক মুসলমানকে মানতে হয়৷
আরো পড়ুন: গোঁফ ভিজিয়ে পানি পান করা কি হারাম?
এক ব্যক্তি আমার নিকট জানতে চেয়েছেন যে, লাশ দাফনের পরে একাকী বা সম্মিলিতভাবে তার জন্য দোয়া করা জায়েয় আছে কি না?
লাশ দাফন করার পর একাকী বা সম্মিলিত দোয়া করা জায়েয আছে৷ এর প্রমাণ হাদীসে বিদ্যমান৷ নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরও এর উপর আমল রয়েছে৷
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাযিয়াল্লাহু তাআলা আনহু থেকে বর্ণিত তিনি বলেন,
رَأَيْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي قَبْرِ عَبْدِ اللَّهِ ذِي النِّجَادَيْنِ الْحَدِيثَ وَفِيهِ فَلَمَّا فَرَغَ مِنْ دَفْنِهِ اسْتَقْبَلَ الْقِبْلَةَ رَافِعًا يَدَيْهِ.
অর্থাৎ আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জুন নাজাদাইনের কবরে দেখলাম। …………. যখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দাফন থেকে ফারিগ হলেন, তখন তিনি কিবলামুখী হয়ে দুই হাত তুললেন। ইমাম আবূ আওয়ানা তার “সহীহ” নামক গ্রন্থে বর্ণনাটি এনেছেন। [ফাতহুল বারী-১১/২০৯]
হযরত উসমান বিন আফফান রাযিআল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন,
كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، إِذَا فَرَغَ مِنْ دَفْنِ الْمَيِّتِ وَقَفَ عَلَيْهِ، فَقَالَ: اسْتَغْفِرُوا لِأَخِيكُمْ، وَسَلُوا لَهُ بِالتَّثْبِيتِ، فَإِنَّهُ الْآنَ يُسْأَلُ.
অর্থাৎ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন মৃতের দাফন থেকে ফারিগ হতেন, তখন তিনি সেখানে দাঁড়াতেন এবং বলতেনঃ তোমরা তোমাদের ভাইয়ের জন্য দুআ কর, এবং তার জন্য দৃঢ়তার দুআ কর। কেননা, এখনি তাকে সুওয়াল করা হবে। [সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-৩২২১]
উল্লিখিত হাদীসগুলোর দিকে তাকালে আমাদের পরিস্কার হয়ে যায় যে, লাশ দাফন করার পর, বা কবরের পাশে দাড়িয়ে কিবলামুখী হয়ে হাত তুলে মুনাজাত ও দোয়া করা হাদীসের আলোকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকেই প্রমাণিত।
আর সম্মিলিত মুনাজাত বিষয়ে হাদীসে এসেছেঃ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
لَا يَجْتَمِعُ مَلَأٌ فَيَدْعُو بَعْضُهُمْ وَيُؤَمِّنُ سَائِرُهُمْ، إِلَّا أَجَابَهُمُ اللَّهُ.
অর্থাৎ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন “যখনি কোন দল একত্র হয়, তারপর তাদের কথক দুআ করে, আর অপরদল আমীন বলে তখন আল্লাহ তাআলা তা কবুল করে নেন”।
(মাযমাউজ যাওয়ায়েদ, হাদীস নং-১৭৩৪৭, মুস্তাতাদরাক আলাস সহীহাইন, হাদীস নং-৫৪৭৮, আলমুজামুল কাবীর, হাদীস নং-৩৫৩৬)
আরো পড়ুন: মৃতদের দোষ চর্চার ভয়াবহতা
এ হাদীস দ্বারা সম্মিলিত মুনাজাত বা দোয়া করা প্রমাণিত হয়৷ সুতরাং লাশ দাফনের পরে একাকী বা সম্মিলিত মুনাজাত বা দোয়া করা জায়েয আছে৷ আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে সঠিক আমল করার তাওফিক দান করুন৷
লেখক: মুফতি রেজাউল করিম, সুফফাহ মাদরাসা, মহেশপুর, ঝিনাইদহ