লেখক: মুফতি রেজাউল করিম, সহকারী মুফতি, সুফফাহ মাদরাসা, মহেশপুর, ঝিনাইদহ |
ইসলাম একটি পূর্নাঙ্গ জীবন ব্যবস্থা৷ যাকে বলে কম্পিলিট কোড অফ লাইফ৷ মানব জীবনের প্রত্যেকটি ছোট থেকে ছোট বিষয়েরও সমাধান রয়েছে এ ধর্মের কিতাবগুলোতে৷ বিশেষ করে কুরআন সুন্নায় রয়েছে সবকিছুর সমাধান ও সলিউশন৷ বাদ যায়নি গোঁফ বা মোচের বিষয়টিও৷ তাই এ প্রবন্ধে আলোচনা করবো গোঁফ নিয়ে কিছু সামাজিক ভুল ধারনা ও তার নিরসন৷
গোঁফ ও মেডিকেল সাইন্স
ইসলামের কোনো বিধান চিকিৎসা বিজ্ঞানের সাথে সাংঘর্ষিক নয়৷ বরং ইসলামী বিধানাবলী কারেন্ট মেডিকেল সাইন্স থেকেও উন্নত ও যুক্তিযুক্ত৷ বেশি সময় ধরে গোঁফ বড় করা স্বাস্থ্যসম্মত নয়। গোঁফের মাধ্যমে মানুষের শরীরে রোগ-জীবাণু ও ব্যাকটেরিয়া প্রবেশের প্রবল আশঙ্কা থাকে। মোচে লেগে থাকা ধুলো-বালি, ঘাম ইত্যাদি খাবারের সঙ্গে মিশে পাকস্থলীতে গিয়ে বিভিন্ন ধরনের রোগ-জীবাণুর সৃষ্টি করতে পারে। তাই কোনোভাবেই গোঁফ লম্বা করা উচিত নয়।
হাদিস শরীফে গোঁফ ছোট করার কথা বলা হয়েছে। হাদিস শরিফে এসেছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
انْهَكُوا الشَّوَارِبَ، وَأَعْفُوا اللِّحَى
অর্থাৎ তোমরা গোঁফ অধিক ছোট করবে এবং দাড়ি বড় রাখবে। [সহিহ বুখারি, হাদিস: ৫৮৯৩]
গোঁফ ভিজিয়ে পানি পান করা কি হারাম?
কিছু কিছু মানুষের ধারণা বিশেষ করে গাঁও গ্রামের মুরব্বিরা৷ তারা মনে করে পানি পান করতে গিয়ে যদি গোঁফে পানি লেগে যায় তাহলে ঐ পানি পান করা হারাম বা নাপাক হয়ে যায়। এটি একটি ভুল ধারণ এবং নিছক ধারণা-প্রসূত একটি কথা।
হাদীস শরীফে এসেছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
قصوا الشوارب واعفوا اللحي
অর্থাৎ তোমরা দাড়ি লম্বা কর, মোচ খাটো কর। (সহীহ বুখারী, হাদীস ৫৮৯৩)
সহীহ বুখারীর উল্লিখিত হাদীস থেকেই কেউ কেউ হয়তো বুঝেছেন, গোঁফ যদি ছোট বা খাটো না করা হয় আর পানি পান করতে গিয়ে ওই মোচে বা গোঁফে পানি লাগে তাহলে ঐ পানি নাপাক হয়ে যায়। এ ধারণা নিছক অসাড় ও অমূলক। মোচ বা গোঁফ তো নাপাক বা অপবিত্র কিছু নয়। মোচ খাটো করার নির্দেশ আর মোচে পানি লাগলে তা পান করা হারাম হওয়া বা নাপাক হওয়া সম্পূর্ণ ভিন্ন ও আলাদা বিষয়।
চল্লিশ দিনের পূর্বেই মোচ বা গোঁফ ছাঁটা
হজরত আনাস ইবনে মালেক রাযিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের জন্য গোঁফ ছাঁটা, নখ কাটা, নাভীর নিম্নভাগের লোম চেঁছে ফেলার ও বগলের পশম উপড়ে ফেলার মেয়াদ নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন যে, আমরা যেন এ কাজগুলো চল্লিশ দিনের বেশি সময় পর্যন্ত ফেলে না রাখি। বর্ণনাকারী বলেন, আরেকবার চল্লিশ রাতের কথাও বলেছেন। (নাসায়ি শরীফ, হাদিস : ১৪) আল্লাহ তাআলা সকলকে বুঝে আমল করার তাওফিক দান করুন৷