ফ্রি ফায়ার খেলা কি হারাম? ইসলাম কী বলে?

ফ্রি ফায়ার কি হারাম? তোমার চরম শত্রুর সাথে যুদ্ধ করার দরকার নেই। তাকে একটি ফ্রিফায়ার বা পাবজি গেইম দিয়ে দাও।

ফ্রি ফায়ার খেলা কি হারাম? ইসলাম কী বলে?


এ সব গেইমের নেশায় সে এমন জব্দ হবে যে, তার জীবনের বিরাট একটি অংশ সে লোকসান করে ফেলবে। তোমার সাথে শত্রুতার সময়ই পাবে না।



আমাদের তরুণ তরুণীরা এই গেইমটি খেলতে গিয়ে তাদের জীবনের যে ক্ষতিটা করছে তা হয়তো নিষ্ঠুর কোনো শত্রুও করতে পারতো না।


তারা তাদের জীবন থেকে যে মূল্যবান সময়গুলো নষ্ট করছে তা এক পৃথিবী স্বর্ণ মুদ্রার বিনিময়েও ফিরিয়ে আনতে পারবে না।


মানুষ যখন ফ্রি ফায়ার গেইম নিয়ে এতো উন্মাদ তখন সেটা হালাল না কি হারাম তা আলোচনা করাটা জরুরী হয়ে পড়ে।


তাই আজ আমরা আলোচনা করছি ফ্রি ফায়ার কি হারাম? ইসলাম কী বলে?

এই বিষয়টি নিয়ে। আশা করি ভালো কিছু কথা তুলে ধরতো পারবো।


ব্লগটিতে থাকছে –


ফ্রি ফায়ার গেইম কি

ফ্রিফায়ার গেমের ক্ষতি

ফ্রি ফায়ার কি হারাম

গেমের নেশা থেকে মুক্তির উপায়


ফ্রি ফায়ার গেইম কি?



ফ্রি ফায়ার হলো – একটি ব্যাটল রয়্যাল গেইম। 

ব্যাটল রয়্যাল মানে হলো যুদ্ধক্ষেত্র। তাই স্বাভাবিকভাবেই যুদ্ধক্ষেত্রের মতো দুটি পক্ষ থাকবে। থাকবে সব রকম অস্ত্র শস্ত্র।


একপক্ষ সর্বদা অপর পক্ষকে আক্রমন ও হত্যা করতে প্রস্তুত থাকবে। শেষ পর্যন্ত যে বেঁচে থাকবে সেই জয়ী হবে।


এ কারণেই এ গেইমটি ছোট বড় সবার কাছে বেশ জনপ্রিয়। অনেকে আবার এ গেইমকেই প্রফেশন হিসাবে তৈরি করতে চেষ্টা করেন।


ফ্রি ফায়ার গেইমের ক্ষতিঃ


যেহেতু বাস্তবতার সাথে এই গেইমের কোনো মিল নেই তাই বলা যাবে যে এটার দ্বারা শত্রুকে বুলট করে পরাস্ত করার প্রশিক্ষণ লাভ হয়। তাই এটি সম্পূর্ণটাই ক্ষতি।


ফ্রি ফায়ারের বিশেষ কয়েকটি ক্ষতি


১. আসক্তি।


প্রতিটি ফ্রি ফায়ার গেইমারের মধ্যে একটি আসক্তি জন্ম নেয়। ধীরেধীরে তা প্রবল শক্তিশালী হতে থাকে।


এই আসক্তি বা নেশা একজন গেমারকে স্বাভাবিক জীবন যাত্রা থেকে বিচ্যুত করে দেয়। ফলে সে খাবার ঘুম গোসল বা অন্যান্য প্রয়োজনীয় সকল কর্ম থেকে বিমুখী হয়ে ওঠে।


নেশা যে কেবল মদ হিরোইনে হয় ব্যাপারটি আসলে তা নয়। খাদ্য দ্রব্য ছাড়াও কর্ম ক্রিয়ায় নেশা হতে পারে।


যেমন যারা পর্ণ দেখে তাদের কাছে সেটা একটি নেশা হয়ে যায় ঠিক একইভাবে যারা গেইম খেলে তাদের কাছে গেমও একটি নেশা হয়ে যায়।


এ কারণেই দেখা যায় অনেক মানুষ গেইম থেকে বেরিয়ে আসতে চাইছে। চিরতরে এসব খেলা ছেড়ে দিতে চাইছে কিন্তু পারছে না।


যেভাবে মদের বা পর্ণের নেশা থেকে সহজে বেরিয়ে আসা যায় না। ঠিক এ কারণেই গেইমও মদ বা পর্ণের মতো একটি নেশা সৃষ্টকারী মাধ্যম।


২. সময় নষ্ট


গেইম খেলার পেছনে যে সময়টা ব্যয় হয় তা একদম অনর্থক। ঘন্টার পর ঘন্টা একেকজন ছেলে মেয়ে গেমের পেছনে নষ্ট করে দেয়।


অথচ এ সময়টা ছিলো তার লেখা পড়া বা অন্য কোনো গুরুত্বপূর্ণ কাজের। কিন্তু গেইমে বসে সে ভুলে গেছে তার গুরুত্বপূর্ণ কাজটি।


এবার আসুন আমরা একটি সহজ ক্যালকুলেট করে নেই। ধরুন একজন ব্যক্তি প্রতিদিন ৩ ঘন্টা করে ফ্রি ফায়ার খেলে।


তাহলে ৩০ দিনে সে ৯০ ঘন্টা সময় নষ্ট করে দিচ্ছে গেমের পেছনে।


কিন্তু যদি এই সময়টা সে তার স্কিল ডেভেলপ বা কোনো ব্যবসার পেছনে ব্যয় করতো তবে তার জীবনটাকে ফসলতার মঞ্চে দাঁড় করাতে পারতো।


৩. স্বাস্থ্য ও মানসিক ক্ষতি


ফ্রি ফায়ার গেমের সব থেকে খারাপ বিষয়টি হলো স্বাস্থ্য ও মস্তিষ্ক নষ্ট হওয়া। রাত জেগে ফ্রি ফায়ার খেলার কারণে গেমারের স্বাস্থ্য ভেঙে পড়ে।


একইভাবে তার মস্তিষ্কের উপর অনেক বিরুপ প্রভাব পড়তে পারে। যা আগামী দিনে তার জন্য অনেক বিপজ্জ্বনক হতে পারে।


এছাড়া চোখে সমস্যা, হাতের ক্বজিতে ব্যাথা, পিঠের দিকের হাড়ে ব্যাথা ইত্যাদি স্থায়ীভাবে হতে পারে। 


৪. নামাজ আদায় না করা


ফ্রি ফায়ার গেমারের কাছে না ছাড়া একটি তুচ্ছ ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়। তাকে যদি বলা হয় নামাজে আসো, সে হয়তো বলবে আসছি।


তখন ঠিক করবে চলতি খেলাটি শেষ করেই নামাজটি আদায় করে নিবো। কিন্তু স্টার্ট হওয়া খেলাটা আর শেষ হচ্ছে না।


অতপর খেলা শেষ হওয়ার পর দেখা গেলো জামাত শেষ হয়ে গেছে। এদিকে সে চরমভাকে হেরে গেছে। তাই প্রতিশোধের নেশার আনেকটি গেম শুরু করা দরকার।


এভাবে একজন ফ্রি ফায়ার গেমার আর নামাজ আদায় করতে পারে না। ধীরেধীরে নামাজ ছাড়াটা তার নৈমিত্তিক বিষয় হয়ে যায়।


৫. পিতামাতার অবাধ্য


ফ্রি ফায়ার খেলতে গিয়ে কতো ছেলে মেয়ে যে তাদের বাবা মায়ের অবাধ্য হচ্ছে সেটি সঠিকভাবে বলা মুশকিল।


ছেলে মেয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা গেইম নিয়ে পড়ে থাকলে বাবা মা থাকে নিষেধ করবে এটাই স্বাভাবিক কিন্তু ছেলে মেয়ে তাদের কোনো পাত্তাই দেয় না।


আবার কখন যদি বাবা মা তার গেইমার সন্তানকে কোনো ছোট খাট কাজের জন্য ডাকেন তখন দেখা যায় সে গেমের নেশায় মত্ত থাকার কারণে তাদের কথাটি শুনছে না।


আমরা প্রতিনিয়তো খবরে দেখতে পাই গেম খেলতে গিয়ে বাবাকে খুন।


আবার কখনো দেখা যায় বাবার ব্যাঙ্ক ব্যালেন্স খালি করে দিয়েছে গেমার ছেলে।


ফ্রি ফায়ার গেইম কি হারাম?


আমরা উপরে ফ্রিফায়ার গেমের বেশ কয়েকটি ক্ষতিকর দিক আলোচনা করে এসেছি। যার প্রতিটি কারণই এই গেমটিকে হারাম হওয়ার দাবি করে।


এছাড়াও আরো অনেক কারণ রয়েছে যা এ গেইমটি হারাম ঘোষণা করার জন্য যথেষ্ট। তবে একটি বিষয় ক্লিয়ার করে দেওয়া প্রয়োজন।


এই গেইমটি কিন্তু মদ বা পর্ণের মতো হারাম নয়। অর্থার এটি শুরু থেকেই হারাম এমন কিন্তু বলার অবকাশ নেই।


যেভাবর মদ বা পর্ণ একদম শুরু থেকেই হারাম। তবে ফ্রি ফায়ার গেইমটি একটি পর্যায়ে গিয়ে হারাম হবে।


বা যারা এটি খেলতে গিয়ে সীমালঙ্ঘন করে ফেলবে তাদের জন্য হারাম।


আর সীমালঙ্ঘন তখনই প্রমাণিত হবে যখন উপরে আলোচিত যে কোনো এক বা একাধিক কারণ কোনো ফ্রিফায়ার খেলোয়াড়ের মধ্যে বিদ্যমান থাকবে।


অন্যথা কেউ একজন এ গেইমটি একটু সময় খেলছে দেখার জন্য বা বুঝার জন্য তখন তার জন্য এটি হারাম নয়।


আবার কেউ ফ্রি ও অবসর সময়ে দশ বিশ মিনিট গেমটি খেলছে আর এর প্রতি তার নেশা বা চরম আগ্রহ নেই তখন তার জন্য এটি হারাম নয়।


যদিও একটু একটু করে সে আসক্তির দিকে যাওয়ার সম্ভাবনা বিদ্যমান।


এ জন্য সব থেকে উত্তম পন্থা হলো কখনই এ গেমটির ধারে কাছে না যাওয়া।


ফ্রি ফায়ার গেমের নেশা থেকে মুক্ত থাকার উপায়ঃ


প্রথমেই বলে রাখি যারা এই গেইমটি খেলেনি তারা কখনই এটি খেলতে বা ট্রাই করকে যাবেন না। তবে আপনি নিরাপদ থেকে গেলেন।


আর যারা অলরেডি আসক্ত হয়ে গেছেন কিন্তু এ থেকে বেরিয়ে আসতে চাইছেন তাদের জন্য নিচে কয়েকটি উপায় বলে দিচ্ছি।


১. আল্লাহকে ডাকুন। তার কাছে নিজের মনের সকল আবেদন তুলে ধরুন।

২. সব সময় কাজে ব্যস্ত থাকুন। দৈনিক রুটিন তৈরি করে রাখুন। খেয়াল রাখুন সেখানে যাতে অসবর সময় না থাকে।

৩. পবিত্র কুরআন তেলাওয়াত করুন। হাদিস চর্চা করুন।

৪. ভালো ভালো বই পড়ুন। বই মানুষের পরম বন্ধু।

৫. অসৎ ও গেইম লাভার বন্ধুদের সঙ্গ এড়িয়ে চলুন।

৬. গেইম কেন্দ্রিক সোসাল এক্টিভিটি বন্ধ করে দিন।

সত্য প্রকাশ

My name: Mufti Rezaul Karim. I am teaching in a communal madrasah, I try to write something about Deen Islam when I have time because I have a fair amount of knowledge about online. So that people can acquire Islamic knowledge online. You can also write on this blog if you want.

Please Select Embedded Mode For Blogger Comments

أحدث أقدم