ইসলামে বিজয় দিবস উদযাপনের রুপরেখা

ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ জীবন ব্যবস্থা। ইসলামে রয়েছে সবকিছুর সমাধান। ইসলাম কথা বলেছে সব বিষয়ে। সামনে আমাদের বিজয় দিবস। যদি ইসলাম কে প্রশ্ন করি, ইসলামে বিজয় দিবস উদযাপনের রুপরেখা কি?  ইসলাম এর সঠিক উত্তর আমাদের সামনে তুলে ধরবে ইনশাআল্লাহ। তাই আজ আলোচনা করবো, ইসলামে বিজয় দিবস উদযাপনের রুপরেখা কি? এ বিষয় নিয়ে। 

ইসলামে বিজয় দিবস উদযাপনের রুপরেখা

আমাদের দেশে েবিজয় দিবসে চলে অশ্লীলতা ও নোংরামি। চলে পর্দাহীনতা। গান বাদ্য তো আছেই। আমরা যদি  ইসলামে বিজয় দিবস উদযাপনের রুপরেখা জানতে পারি তাহলে এ থেকে রক্ষা পাব ইনশাআল্লাহ। তাহলে শুরু করা যাক।

স্বাধীনতা মানবজীবনে মহান আল্লাহর শ্রেষ্ঠ এক নেয়ামত। মহান আল্লাহ মানুষকে স্বাধীন সত্তা দিয়ে পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন। আর তার স্বাধীন বিচরণক্ষেত্র হিসেবে বিশা ল-বিস্তৃত পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন। পরাধীনতা মানবজীবনে সবচেয়ে বড় বঞ্চনার নাম। বাবা আদম (আ.) ও মা হাওয়ার আবাসভূমি ছিল পৃথিবীজুড়ে। পৃথিবীর বিশাল বক্ষে তখন কোনো সীমানা চিহ্ন আঁকতে পারেনি কেউ। তারপর তাঁদের সন্তানরা পারস্পরিক স্বার্থপরতার পথ ধরে বিভক্ত হয়ে পড়েছে, সীমানা চিহ্ন দিয়ে বিভক্ত করে ফেলেছে নিজেদের আবাসভূমি। সৃষ্টি হয়েছে পৃথিবীজুড়ে অসংখ্য স্বাধীন রাষ্ট্র। জন্ম নিয়েছে ভিন্ন ভিন্ন স্বাধীন জাতি।আর যখনই কোনো জাতির এক অংশ অন্য অংশের দ্বারা নিজেদের স্বাধীন অধিকার খর্ব হতে দেখেছে, একে অন্যের দ্বারা শোষিত ও বঞ্চিত হয়েছে, তখনই শোষিত জনগোষ্ঠী শোষণকারীদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছে এবং নিজেদের মুক্ত করতে সংগ্রাম করেছে। একই ধারায় পশ্চিম পাকিস্তানি শোষকদের বিরুদ্ধে সাড়ে ৯ মাসের মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশের সৃষ্টি এবং স্বাধীন বাঙালি জাতির অভ্যুদয় হয়েছিল ১৯৭১ সালে।

স্বদেশপ্রেম প্রতিটি মানুষের স্বভাবজাত অভ্যাস, বিশেষত মুসলমানদের প্রতিটি রক্তকণিকায়ই দেশপ্রেমের শিহরণ থাকা বাঞ্ছনীয়। কেননা মহানবী (সা.) ছিলেন দেশপ্রেমিকের সর্বোত্তম দৃষ্টান্ত। মহানবী (সা.) কোনো সফর থেকে প্রত্যাবর্তনকালে মদিনার সীমান্তে ওহুদ পাহাড় চোখে পড়লে নবীজির চেহারায় আনন্দের আভা ফুটে উঠত। তিনি বলতেন, 

                                          هذا جبل يحبنا و نحبه 

 ‘এই ওহুদ পাহাড় আমাদের ভালোবাসে, আমরাও ওহুদ পাহাড়কে ভালোবাসি। ’ (বুখারি : ১০২৮)

দেশপ্রেমের অন্যতম বহিঃপ্রকাশ হলো, দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও নিরাপত্তার জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করা। হাদিস শরিফে এসেছে, 

رِبَاطُ يَوْمٍ وَلَيْلَةٍ خَيرٌ مِنْ صِيامِ شَهْرٍ وقِيامِهِ، وَإنْ ماتَ فيهِ جَرَى عَلَيْهِ عمَلُهُ الَّذي كَانَ يَعْمَلُ، وَأُجْرِيَ عَلَيْهِ رِزقُهُ، وأمِنَ الفَتَّانَ

‘আল্লাহর পথে এক দিন ও এক রাত সীমান্ত পাহারা দেওয়া এক মাস পর্যন্ত সিয়াম পালন ও এক মাস ধরে রাতে সালাত আদায়ের চেয়ে বেশি কল্যাণকর। যদি এ অবস্থায় সে মৃত্যুবরণ করে, তাহলে যে কাজ সে করে যাচ্ছিল, মৃত্যুর পরও তা তার জন্য অব্যাহত থাকবে, তার রিজিক অব্যাহত থাকবে, কবর-হাশরের ফিতনা থেকে সে নিরাপদ থাকবে। ’ (মুসলিম, ১৯১৩)

ইসলাম ধর্মে বিজয় দিবস উদ্যাপনের সুনির্দিষ্ট নীতিমালা আছে। এই দিনের অন্যতম করণীয় হলো—আট রাকাত নফল নামাজ পড়া। কেননা নবী (সা.) মক্কা বিজয়ের দিন শুকরিয়াস্বরূপ আট রাকাত নামাজ আদায় করেছিলেন। (জাদুল মা’আদ, আল্লামা ইবনুল কাইয়িম জাওজি)

বিজয়ীদের করণীয় সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে,

إِذَا جَاءَ نَصْرُ اللَّهِ وَالْفَتْحُ (1) وَرَأَيْتَ النَّاسَ يَدْخُلُونَ فِي دِينِ اللَّهِ أَفْوَاجًا (2) فَسَبِّحْ بِحَمْدِ رَبِّكَ وَاسْتَغْفِرْهُ إِنَّهُ كَانَ تَوَّابًا (3)

 ‘যখন আসবে আল্লাহর সাহায্য ও বিজয়, তুমি মানুষকে দলে দলে আল্লাহর দ্বিনে প্রবেশ করতে দেখবে। তখন তুমি তোমার প্রতিপালকের পবিত্রতা বর্ণনা করো। আর তাঁর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করো। নিশ্চয়ই তিনি ক্ষমাশীল। ’ (সুরা : নাসর, আয়াত : ১-৩)

এ আয়াত থেকে জানা যায়, বিজয় দিবসের দিন আমাদের যা করতে হবে তা হচ্ছে—

►   আল্লাহর বড়ত্ব ও পবিত্রতার বর্ণনা করা।

►   যুদ্ধ চলাকালীন আমাদের অজান্তে যেসব ভুলত্রুটি হয়েছে, তার জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইতে হবে।

আর হাদিস শরিফ থেকে আমরা জানতে পারি—

    আট রাকাত নামাজ আদায় করা।

    মৃত ব্যক্তিদের জন্য ইস্তেগফার ও দোয়া করা। কোরআন পাঠসহ বিভিন্নভাবে ইসালে সওয়াব করা।


এ হলো, ইসলামে বিজয় দিবস উদযাপনের রুপরেখা। প্রত্যেক মুসলিমের উচিত, ইসলামী সংস্কৃতি অনুসরণ করে মৃত ব্যক্তিদের স্মরণ করা ও বিজয় উদ্যাপন করা।

লেখকঃ মুফতি রেজাউল করিম যশোরী, মুহাদ্দীস সুফফাহ মাদরাসা, মহেশপুর

সত্য প্রকাশ

আমার নামঃ মুফতি রেজাউল করিম। আমি একটি কওমী মাদরাসায় শিক্ষকতা করছি। পাশাপাশি এ ব্লগের সম্পাদক এর দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছি। অনলাইন সম্পর্কে মোটামুটি জ্ঞান থাকায় সময় পেলে দ্বীন ইসলাম নিয়ে কিছু লেখার চেষ্টা করি। যেন অনলাইনেও মানুষ ইসলামি জ্ঞান অর্জন করতে পারে। আপনিও চাইলে এ ব্লগে লিখতে পারেন। মোবাইলঃ 01782-40 91 69

Please Select Embedded Mode For Blogger Comments

নবীনতর পূর্বতন